শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

স্বরধ্বনি ত্রৈমাসিক ব্লগ পত্রিকা, অক্টবর--ডিসেম্বর, ২০১৯


 

সম্পাদকীয়--

   

এক দুই করে এটা আমাদের স্বরধ্বনির তৃতীয় সংখ্যা। সংখ্যার গুণগতমান কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে তা পাঠক বলতে পারবেন। তবে এটা ঠিক, আমরা ক্রমশ ধীর গতিতে হলেও এগিয়ে যাচ্ছি। আর শুধু এগোনোই বলব কেন, লেখক লেখিকাদের লেখায় গুণগত মানও বৃদ্ধি পেয়েছে--এটা একটু খুঁটিয়ে না দেখলে বোঝার কথা নয়। নির্বাচনের দিক থেকে চেষ্টা করা হয়েছে সুন্দর ভাবময় লেখার সমাবেশ ঘটাবার। এ ভাবে স্বভাবতই কিছু কবির লেখা আমরা প্রকাশ করতে অপারক  হয়েছি।

যাদের লেখা এবার প্রকাশিত হল না, তাঁদের সনির্বন্ধ অনুরোধ, তাঁরা যেন নিরুৎসাহিত না হন। লেখার ক্ষেত্রে অভ্যাসগত মান অনেকটাই নির্ভর করে। তাই বলবো, আগামীর দিকে তাকিয়ে তাঁরা যেন লেখা চালিয়ে যান। নিশ্চয়ই উন্নততর লেখা তাঁদের কলম দিয়ে বেরিয়ে আসবে।  

এটা একটা অনলাইন লিটল ম্যাগাজিন। এর ভূত-ভবিষ্যৎ কতটা উন্নতি সাপেক্ষ সেটা আগামী বলে দেবে। পাঠকের কাছে আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ, আপনারা আমাদের এই পত্রিকা পড়ুন। সঠিক সমালোচনা করুন, পাঠক বিশ্লেষণী আমাদের সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। আর এ ভাবেই পত্রিকার পক্ষ থেকে আগামীর মুদ্রিত সংখ্যা প্রকাশ করার ইচ্ছে নিয়ে আমরা সচেষ্ট  থাকবো। হয়ত সেটা সময় সাপেক্ষ, কিন্তু আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা সফল হবই। ধন্যবাদান্তে-- 

স্বরধ্বনি পত্রিকার পক্ষ থেকে-- 

সম্পাদক: তাপসকিরণ রায়

সহ-সম্পাদক: শ্রী শমিত কর্মকার।


সূচিপত্র : হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, কাবেরী তালুকদার, রমণীমোহন দেওয়ানজী, 

অঞ্জলি চক্রবর্তী, মনীষা কর বাগচী, সন্ধ্যা রায়, সান্ত্বনা চ্যাটার্জ্জী, রূপা বাড়ৈ, মাথুর দাস, পৃথা বিশ্বাস, সুচন্দ্রা বসু, আলমগীর সরকার লিটন, উশ্রী মন্ডল, শমিত কর্মকার, তাপসকিরণ রায়



খোকা, ফিরে আয়

হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়


পৃষ্ঠদেশ ছেড়ে কত-টা ওপরে

উঠে যাও, হে মানুষ !

তবে কি নিশ্চিন্ত তুমি,

জানো, কি জানো না--সকলে কেমন আছে ?

অতখানি উচ্চলোক থেকে

দেখতে কি পাও--

পৃষ্ঠদেশে বিষ্ফোট, দগদগে ঘা ?

মাটির মানুষ আজ মাটিতেই ছটফট করে,

অন্তঃরীক্ষে চেয়ে থাকে কৃপাপ্রার্থী হয়ে।

তাই তুমি অন্তঃরীক্ষে যাও ?

অন্তঃরীক্ষ থেকে সঞ্জিবনী এনে দিতে চাও ?


এই পৃষ্ঠদেশ নেই-রাজ্য নাকি ?

নাকি গা-ঢাকা দিয়ে

অন্য দেশে বসতি বানাও ?


নেমে এসো পৃষ্ঠদেশে,

যা কিছু হারাও ঐ লোকে গিয়ে

সে সব সাজিয়ে নিয়ে

মা তোমার ব'সে আছে ঠিক।

বার বার ডেকে চলে গভীর জঠর থেকে--

খোকা, ফিরে আয়।

আমার বুকের দুধে আজও স্রোত আছে।




অবক্ষয়

কাবেরী তালুকদার


একদিন ঈশ্বর নেবে এলেন মর্তধামে।

কেন শুনি এত হাহাকার আমার শ্রেষ্ঠ কীর্তির, কেন এত ক্ষোভ।

দিলাম খাদ‍্য, মাঠ ভরা শ‍্যামলিমা,দিলাম বস্ত্র বাস স্থান।

দিলাম বিদ‍্যা, শেখো স্রদ্ধা,  ভক্তি, ভালোবাসা।

দিলাম প্রেম, অন্তর তার ভরা থাকুক সুদ্ধ চিন্তায়, শুভ ইচ্ছায়।

বুদ্ধি দিলাম, করো উপার্জন।

সুখ দিতে সৃষ্টি করলাম নারী, স্বর্গ হতে ধারি।

দুঃখ পেতে দিলাম মৃত্যু ও কষ্ট। সব ই তো দিলাম।

কিছু তো আর নেই বাকী।তবে কেন এত হানা হানি,

ভাইয়ে ভাইয়ে করে মারামারি। একি অবক্ষয় ।

চমকে ওঠেন ঈশ্বর। নারীর বসন ধরে করে টানাটানি।

এরা আমারই শ্রেষ্ঠ কির্তী মানুষ। এতো অসম্মান।

ফিরে এসো মা গো, কাঁদেন ঈশ্বর।

স্বর্গেই হোক তোমার আবার অধিষ্ঠান।

সোনার সিঙ্গাসন হতে পাঠিয়ে ছিলাম মাটির ঘরে,

মানুষের হৃদয়ের সিঙ্গাসনে। সেথায় হল না ঠাই।

আমার হৃদয়ে বাস করো মাগো, ক্ষমা করো, এ ঈশ্বর নরাধমে।।



আশার আলো 

রমণীমোহন দেওয়ানজী


জীবনটা যেন নৈরাশ‍্যে ভরা,

যেন অন্ধকারময় কূপ,

নেই তো সেথা আশার আলো--

সজীব করা,

নেই তো সেথা সুগন্ধি ধূপ ।

অন্ধ বিবর--সুগভীর তল, 

পূতি গন্ধময়,

ঘৃণ‍্য কীটের সহবাস--

মিলেমিশে একাকার--

চলছে সময়,

মহাকাল করে অট্টহাস ।


গ্ৰীষ্ম, বর্ষা, বসন্ত নিয়ে

ঋতুচক্র গতিময়,

বহে চলে মৌসুমি, দখিন বাতাস,

পাখির কূজন, ভরে নাত মন তবু--

এ কী ভাগ‍্যের পরিহাস ।


সহসা দেখি আলোর রেখা

কোন সুদূর থেকে দিয়েছে দেখা

গিয়েছে আমার হৃদয় ভরি--

অন্ধ নয়নে মোর দিয়েছ আলো,

দূর হল আজ সকল কালো

কোথা হতে এলে জাদুকরি ?


মায়াময় হাসি তব মুখে,

বাঁশি বাজায় আজি মোর বুকে,

নব বসন্ত এসেছে নূতন সাজে ।


সুরভি, তোমার সুগন্ধ নিয়ে

ভালবাসার মদিরা পিয়ে

থাকো সদা পাশে,

থাকো সব কাজে ।।





কোন অভিমানে

অঞ্জলি চক্রবর্তী


কোন অভিমানে ফেরালে ও প্রিয় মুখ।

আমি তো যোগ্য নই কোন প্রেমর আধার-‐-

জলের স্বভবে জল পাত্র অনুরূপ

আমিও জলের বুকে ভাসাই সম্পান

নৌকা নয় খড় কুটো শুধু অর্বাচীন। 





হায়রে মানুষ

মনীষা কর বাগচী


হায়রে মানুষ ! সৃষ্টির নিকৃষ্টতম জীব

কোনো লাজ নেই আমাদের

নিজের স্বার্থের জন্য করতে পারি সব‌ই ।


জ্বালিয়ে দিয়েছি আগুন

দাউ দাউ জ্বলছে গাছ-পালা পশু-পাখি, আগামী প্রজন্ম

শেষ হচ্ছে অক্সিজেন, ফুরিয়ে যাচ্ছে আয়ু, ছাই হচ্ছে

ভবিষ্যৎ...


অসহায় প্রাণীদের চিৎকারে কম্পিত আকাশ বাতাস

বীভৎস তাপে ঝলসে যাচ্ছে আমাজনের সহজ সরল

মানুষ।


তাতে কী আমরা তো ভালো থাকবো, জঙ্গল সাফ করে

গগনচুম্বী বিল্ডিং বানাবো। বড় বড় লাইট জ্বলবে, মুছে

যাবে অন্ধকার

নাচব গাইব উন্মত্ত হব, জীবনের সমস্ত সুখ করব

উপভোগ, সময় কোথায় প্রকৃতির কথা ভাববার ...


হায়রে বুদ্ধিমান জীব ! আমরা তো ভালো থাকার

মানেই জানি না

ভালো থাকতে জানিনা...




সুখ

সন্ধ্যা রায় 



সুখ নেবে গো সুখ ?

এত ভোরে ঘুম ভাঙালো কে ?

এমনি করে ঘরের দোরে 

সুখ নিয়ে কে ফেরি করে ?


কে বেঁচে এই সুখ, 

কেই বা সুখের বাজার কেনে ?

আমার দ্বারেও আসবে বুঝি 

সুখের হবে আনাগোনা। 


সুখ কিনবো আঁচল ভরে 

রাখবো ঘরে আলো করে। 

এক গোছা সুখ দে না আমায়-- 

সুখ ভরে দিই কানায় কানায়। 


দাঁড়িয়ে কেন ঘরের দোরে ?

আয়না নিয়ে এই অঙ্গনে !

সুখ যে আমার বড় বেয়াদব

ছুট্টে পালায় সদর পানে। 


আমার যে ফুলটুসিটা

সদাই খুশির আঁচল টানে,

সকাল সন্ধ্যে ধূপধুনোতে

লক্ষ্মী মায়ের আঁচল বোনে। 


জানি সুখ ধরবে তোকে--

তোরই চোখকে দিয়ে ফাঁকি, 

অবশ্যই সুখ ধরবে তোকে

এবার এটা বলে রাখি।



সান্ত্বনা চ্যাটার্জ্জীর কবিতা—


পেনসিল  


আমার অষুধের জায়গাটা কোথায় গেল ?

ঘুম আসছে না, বুকের বেথা বেড়েই চলেছে,

চোখ বন্ধ করলে শুনতে পাচ্ছি

ঢেউয়ের শব্দ জব্দ জব্দ জব্দ--


আমার পেনসিলটা কোথায় গেল?

ব্যাথা মুখ বুজে বসে আছে-

গুমরে মরছে বুকের ভিতর।

বন্ধ দরজা জানালা কি

 রুখতে পারে তোলপাড়, পাহাড় প্রমান ঢেউ?

তবু তাকে লুকিয়ে রাখার উপায়টা কোথায় গেল

আমার পেনসিলটা কোথায় গেল?

পারবে পারবে পারবে তোমরা এনে দিতে ঘুম-

নিঝুম রাতে!

কিম্বা স্বপ্নের মাঝে হারিয়ে যাওয়া

পথ খুজে দিতে ?


ডাক্তার তুমি কি দেখবে

আমার মাথার পোকাগুলো-

ঘিন ঘিনে কালো কালো।

আস্ত আস্তে সুরঙ্গ করে বুকের মধ্যে এসে জমা হয়-

তখন শুধু ভয় , ভয় আর শুধু ভয়!


চলে যাও, চলে যাও চলে যাও

তোমরা সব  

আর নয় আমার পেনসিলটা দাও ।


আমার কবি মন


বআকাশ ধূসর মেঘে ঢাকা,

 একটি দুটি তারা উঁকি মারে;

মনের আকাশে ঝরো ঝরো,

গদ্য পদ্য চুপিসারে,

আসে আর যায়।


মন জানে, এরা শুধু হৃদয়ে

জমাবে ভির -রোজকার মতো  

হিসাব রাখিনা আর কত

চন্দ্রিমার অশ্রুজল

অপ্রকট থেকে যায় ।


দূরে শুয়ে গাড়ির তলায়

 গুটিকয় দেশি সারমেয়

থেকে থেকে গলা খুলে ডাকে

কে জানে হয়ত পেয়েছে ঘ্রাণ

হতাশার যদি গন্ধ থাকে ।


যে সময় তোমার ছিল কবি

জীবনের আনন্দ ফেলে ; দুঃখ বেছে নিলে ;

সেদিনের প্রকাশিত যত কথা ,

মনে হয় আমায় দিয়েছিলে ।


সময় তো অশেষ পথ চলেছে

আদি অন্তহীন তারি দুই অসম প্রান্তে

আমি আর তুমি মহাসাগরের দুটি ঢেউ,


যে সাগর ছুঁয়ে আছে তোমায় আমায়।



জাগাতে হবে মানবতা

রূপা বাড়ৈ 


সারাটি বছর কাটে জীবন সংগ্রামী মনোভাবে

ডিসেম্বর এলেই হৃদয়ে বিজয়ের দামামা বাজে

সুরের তালে মন চায় একটি ধ্বনি তুলি প্রাণ খুলে

আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।


বিজয়ের মাস এলেই শীত আসে, কোকিল ডাকে

রক্ত টগবগে মনের ঘরে যৌবন খেলা করে

বীরত্বের সাথে পারি মহাসাগরও হেঁটে পাড়ি দিতে       

দুর্ভিক্ষের অভিশাপ থেকে চাই দেশকে মুক্ত করতে

দুরন্ত বিদ্যুৎ গতিতে এগিয়ে যেতে পারি দুর্গম পথে।


নতুন শামিয়ানার মতো শত্রুর নগ্ন ইশারা যখন পরে

লজ্জাবতী মাতৃভূমি মায়ের বুকে দুর্ভেদ্য সীমা পেরিয়ে,

সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ফেলে গর্জে উঠি তখন দূর্বলতা ভুলে

দুর্দান্ত সাহসী হই স্বপ্নে একাই লড়ি স্রোতের বিপরীতে।


সে দিনের সেই মহা বিজয়ের কথা খুব বেশি মনে পরে

অর্জন করেছিল স্বাধীনতা মুক্তিকামী জাতি বিজয়ে

জখম আর মৃত্যু পথযাত্রী এক সাগর রক্ত বিসর্জনে,

এখনো বেঁচে আছে বাঙালি বিজয়ের সেই স্বপ্ন ঘোরে 


বৃথাই কি মিথ্যা স্বপ্ন দেখা শত্রু বিদায় হবে দেশ থেকে

বিজয় কি জাতি কখনো পাবে স্বাধীনতার স্বপক্ষে

শত্রুর অংশীদারিত্ব সবখানে দেখি বিরাজমান আছে          

কবর দিয়েছে মানবতা পৈশাচিক শক্তির পদতলে।


নির্লজ্জ ঘৃণিত প্রাণী বলে যতই হোক সমালোচনা

ভ্রুক্ষেপহীন চরিত্র ওদের সন্মান নিয়ে ওরা ভাবে না

সর্বক্ষণ ভাবে দেশ জাতি গিলে খাবে মুছবে মানবতা

নিশ্চিহ্ন করে দেবে মহাবিশ্বের কাছে বিজয় স্মৃতিকথা।


শত্রুদের যেতে হবে এ দেশ ছেড়ে মুক্ত মনের এ চাওয়া

তবেই সম্মানীত বিজয়ে পাবো কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা,

হুমকির মুখে পরবে না দেশ সাম‍্যের গান ম্লান হবে না

বিজয়ের পরিত্রাণে বাঙালির জাগাতে হবে মানবতা।



অ-জ্যোতিষ  ছড়া

মাথুর দাস


হরিহর  জ্যোতিষীর   

প্রতি কর প্রতি শির

            জানা আছে এলাকার,

কী  দারুণ   নামডাক

লোকে করে হাঁকপাঁক

            দিন তার মেলা  ভার ।


নির্ভুল   গণনায়

লোকে হাতে ফল পায়

                  চটপট প্রতিকার,

(যদি)  ভাগ্যের পরচায়

যায়  কিছু গচ্চায়

            তাতে আর ক্ষতি কার !


আসলে কী করে জানো  

মানো  আর না-ই মানো

                    সবটাই ধোঁকা যে,

খদ্দের  কাছে এলে   

হাসিমুখে  কথা বলে

               ধাত বোঝে একা সে ।


তার  কিছু সাগরেদ  সহচর

খোঁজ নেয় প্রতি লোক প্রতি ঘর

                কার কী যে হাল চাল,

ঘরে  ঘরে পাশ  ফেল

রোগ অসুখ চাল তেল

                অভাবেই কাটে কাল ।


ডানপিটে ছেলেমেয়ে বশে নেই

ব্যবসায়  সব টাকা খসে যেই

                      মানুষ কী মরবে !

জীবনের যত জয়

চেষ্টায়   সবই হয়

                     পাথর কী করবে ?


সবটাই   বুজরুকি

চালাকির আঁকিবুকি

   বিজ্ঞান কিছু নেই জ্যোতিষেই,

তবু কেন বুঝি না

কারণটা খুঁজি না

টাকা আর পয়সার ক্ষতি সেই !!  




নাই বা পেলাম কাছে

পৃথা বিশ্বাস


একটি ফুলের গল্প, অধরা এ ধরায়

চলার পথে দেখেছি তাকে

তৃষিত চোখে মায়াবী মনে

আমি শুধু তাকেই চাই।


আমি দেখেছি তাকে নীরব মনে

মনের কোণে তাও জানিনা কোন্ কিনারায়

অজানার পথে গিয়েছি বারেবার

শুধু তাকেই দেখার আছিলায়।


চেয়েছি দু'চোখ ভরে দেখতে

সারা দুনিয়ায় আছে কত কথা,

চেয়েছি জানতে সবকিছু

হবে না শেষ জীবনের সময় আছে যা ।


চেয়েছি তোমাকে প্রতিদিন প্রতিটি ক্ষণ

চাতক হয়েছি অবিরাম,

তবুও কাটেনি আমার সে মোহ

তোমাকে দেখার জন্য ছুটেছি আজও।  


পিপাসু দৃষ্টি সলাজ চোখে

চেয়েছি তোমাকে একান্তে

কুল ভাঙ্গা নদীর মত

পথিক হয়েছি আজও জীবন অজান্তে ।


তোমার মোহে জীবন শেষে

আজও ভাবি বসে একা --

জীবন শেষে রেখেছি আজও মনে


ভুল নয় আমার, তোমাকে ভালোবাসা।



রং নাম্বার

সুচন্দ্রা বসু


কাজ যে অনেক বাকি—

খোঁজ নেব তার নাকি ? এখন কি ?

যে করি হা হুতাশে মরি।

ফোন করেছে আড়ি

আছি যে যার বাড়ি

হচ্ছে না যে কথা

মনে বড়ই ব্যথা।

রিং করছি বারেবারে 'হ্যালো'

বলছে অন্য স্বরে বুঝব যে কি করে !

ফোন যাচ্ছে ভুল নম্বরে।

বলছে যে কোন ভাষায়

সেটা বোঝা বড়ই দায়

ফোনে দিলাম কাটা

লোকটা বড় ঠ্যটা।

যতই বলি রং নাম্বার

শোনে কি কথা তার

বুঝি না যে ভাষা

মনে তার কি ছিল আশা।

পেলাম না খোঁজ তার

আছি ঘরে যে যার

বল কি করি আর


মনটা বেজায় ভার।

আলমগীর সরকার লিটনের কবিতা--  


প্রিয় মুখ অবসান


প্রিয় সম্মুখ সাদা সবুজ পথের ধূলি

কিংবা প্রিয় মুখ আর মুখ- আজ জেনো

অম্লান, কেনো না বয়সের ভিড়ে; বিচ্ছেদ

সেতো বহু দূর তবুও উন্মাদ স্মৃতির ঘাস

অথবা পূর্ণিমার চাঁদ; মাঝে মাঝে বিরক্ত বা

নোনা জল অথচ কত আফসোস হাহাকার

সময়ের এক খণ্ডিত অবসাদ- অতঃপর

প্রিয় মুখ সাদা মেঘে ভাসমান এ অবসান।


শখের করাত  


বন্ধু রে- আর কতকাল চালাবে শখের করাত  

বুকটা চিরা যায়- কষ্টে সাজে তারা ভরা রাত;

কতটা জানো তুমি করাতের রক্ত ঝরা ধার-

রক্ত জল দেখে- দেখে কি সুখের পাও স্বাদ;

বন্ধু রে তুমি শখের করাত- কেটে যাও

দিবানীশি করাত- করাত; তুমি শখের করাত;

কত তোমার আঁকা বাঁকা পথের পার

ভুলে গেছো সরিষা ফুলের মাঠ- তবুও বন্ধু

তোমরায় পারো বোধহীন, স্বার্থচিন ভেঙ্গে

দেয়া পাঁজরের র্শাট- অবশেষ দেখো বন্ধু


দেখো একই পথে চলছে শখের করাত।



সমান্তরাল

উশ্রী মন্ডল


একই সমান্তরালে,

তিনটে নদী এঁকে বেঁকে চলেছে,

এই নদীদের নাম যথা ক্রমে হলো অতীত, বর্তমান ও

ভবিষৎ !


এদের মধ্যে,

 ভবিষৎ যেন এক সদ্যজাত শিশু, বর্তমান যেন যৌবনে

পরিপূর্ণ অসীম সম্ভাবনাময় বাস্তবতায় ভরা এক নারী,

সে যেন সময়ের শেষের দিকে, ঐকালের নিয়মে

এগিয়ে চলেছে, আর অতীত যেন বিষণ্ণতা ভরা

বিগতযৌবনা একাকী এক নারী,

তাঁদের নিয়েই তো সময়ের সংসার !


জানো গো,

সময় ভারী দুঃখী হয়ে পড়েছে, এই বর্তমানের বিষণ্ণ

দীর্ঘশ্বাস তাকে ভীষণ ভাবে

বিচলিত করে তুলেছে !

এই বর্তমানের,

আয়ু আর বেশি দিন নেই যে,

সে যে আস্তে আস্তে নিজেকে অতীত আর ভবিষ্যতের

মোহনায় বিলীন করে দেবে,

মা যেমন তার দেহকে বিভক্ত করে এক নবজাতকের

জন্ম দেয়,

তেমনি করে বর্তমান যেন

নবজাতক ভবিষৎকে সৃষ্টি করবে !

এক নবীন সময়ে কালের নিয়মে !


এই বর্তমান,

একসময় নিজেকে দুইভাগে বিভক্ত করে নেবে,

এক অংশ যাবে অতীতের কাছে আরেক অংশ যাবে

ভবিষ্যতে গহ্বরে,


তারপর বর্তমান

ধীরেধীরে ঐ অতীতে পরিণত হবে,

যা শুধুই স্মৃতি হয়েই ক্রমাগত অদৃশ্য হয়ে ইতিহাসে

পরিণত হবে,

নানা গুণী জন নিজ নিজ ধ্যানধারণায় পর্যালোচনা

করবে যুগে যুগে,

তারই বাস্তব ঘটনা, মহিমা, সমালোচনা করে প্রচার করবে,

হয়তো অপভ্ৰংশ হয়ে নতুন রূপে প্রতিষ্ঠিত হবে !


আর ভবিষৎ,

সে যেন প্রথমে টলোমলো ভাবে,

তারপর নতুন উদ্দীপনায় এবং অভিজ্ঞতায় সমবৃদ্ধ হয়ে

বর্তমানে রূপান্তরিত হবে !


আমি এই,

সময় নদীর তীরে বসে দেখি, আশ্চয্য এক সাদৃশ,

যেন সময়ের সাথে মানব জীবনেও পরিলক্ষিত হচ্ছে,

বাল্যাবস্থা, যৌবনাবস্থা সর্ব শেষে বৃদ্ধাবস্থা এরা যেন

এই সময়েরই প্রতিচ্ছায়া,

আপন গতি পথের নিয়মে আপন কর্তব্য ও কর্ম

সম্পাদন করে চলেছে,

তারা যেন একে অপরের পরিপূরক !


আমি অবাক বিস্ময়ে,

দেখছি এই সময় চক্র যেন

তার নিয়ম মতই এই মানব জীবনে বয়ে চলেছে


নিরন্তর, অবিরাম !

শমিত কর্মকারের কবিতা-- 


একটু উষ্ণতা


বহু দিন পর আজ তোমায় ভীষণ মনে পড়ছে। 

তুমি যে এমন ভাবে এসে যাবে জানতাম না! 

এক্টু উষ্ণতার জন্য তোমাকে খুঁজতে বার বার। 

তোমার পরশে মনের আনন্দে নেচে উঠি। 

তুমি আসবে আলিঙ্গনে ভরীয়ে দেব সারা শরীর। 

তোমাকে পাওয়া যে মনকে দোলা দেয়।

একটু উষ্ণতার জন্য কত যে আয়েজন।


আমন্ত্রন 


শব্দে মাধুয‍্য, কিন্তু অনেক অচেনায় ভরা।

বাস্তবিক নিয়মেই চলে তোমাদের সব কথা।

যা পাওয়ার যোগ‍্য বোধ হয় তুমি নয়, তা পেয়েছ হঠাৎ-

পারবে কি তা রক্ষা করতে জনসম্মুখে।

নেই তোমার বেশ নেই তোমার ভাষা নেই কোন প্রতিবাদ।

তবুও একটাই কথা আজ তোমার আমন্ত্রন।

যার টানে এসেছো ছুটে দূর দূরান্ত থেকে-

বলতে পারবে স্পষ্ট করে প্রতিবাদের ভাষা এ রকম নয় অন‍্যরকম।

শিরা উপশিরা দিয়ে বয়ে যাবে প্রতিবাদের রক্ত তবুও মুখে রা নেই।

আসলে তোমরা পরো না, কি ভাবে এগোতে হয়।

শুধু ফিস ফিস করে বলো এটা ঠিক নয় ওটা ঠিক নয়।

আমন্ত্রিত মঞ্চে সদর্পে

বলে উঠতে পারবে না,

আমন্ত্রিত হয়ে এসেছি কিছু বলতে, নিজের মতো কিছু বলতে।

শিরা উপশিরা দিয়ে বয়ে চলা প্রতিবাদের রক্ত যা মানুষের ভালো করে।

যদি নাই পার তবে আমন্ত্রন কক্ষে এসে তোমার কি লাভ !



একটি ছেলে


আমি একটি ছেলে, নাম জানতে চাও ? বলবো না! 

পথেই আমি থাকি পথটাই আমার বাস ঘর। 

আমার কোন নির্দিষ্ট নাম নেই--

তোমাদের বাস ঘর আমার ঘৃণা, আমি তোমাদের অট্টালিকা চাই না! 

পথের স্কুলেই আমার পড়াশোনা শুরু, তারপর--

আমার নির্দিষ্ট কোন পরিচয় নেই, তাই নির্দিষ্ট মা বাবা নেই!

আমি একটা ছেলে কলেজে প্রঙ্গনে ঝান্ডা হাতে। 

আমি প্রতিবাদ করতে শিখেছি, প্রতিবাদ করছি। 

পথকে আমি ভালোবাসি তাই প্রতিবাদে রাস্তায় হাঁটি। 

তোমারা আমায় ঘৃণা করো শুধু প্রতিবাদ করতে জানো না! 

তাই আমি পরিচয়হীন একটি ছেলে। 

আমার জাতের নাম মানুষ, রক্তের রঙ লাল।

তাপসকিরণ রায়ের কবিতা--


চা-পেয়ালার উষ্ণতা


ভালোবাসা হতে না হতে কামনার ফুল ফুটে ছিল-- 

তোমারও প্রসাধনী ঠোট গলে চা-পেয়ালার উষ্ণতা ভরছিল।…

চুমুক দিতে গিয়ে মনে হল শুরুর চুমুটা দেওয়া বাকী রয়ে গেছে  

আলতো স্পর্শ ছোঁয়ায় কি কামগন্ধ থাকে ? 

সেখানে কামিনী গন্ধ ছিল, রাতের নেশা ছিল, 

প্রেম জন্মাতে জন্মাতে আমি তোমার নিষিদ্ধ এলাকায় হাত রাখলাম 

অন্ধকারে কল্পনা বড় হয়ে ওঠে, জলজ্যান্ত তুমি তো আছো 

অথচ তোমার ছবি সাজাতে হচ্ছে-- 

নিতম্ব ও তলদেশ স্পর্শগুলি ক্রমশ তোমায় জাগিয়ে তুলছে 

এবং একটি প্রেম ভ্রম হয়ে ধোঁয়ার মত  উড়ে যাচ্ছে। 

আমি সাঁতার কাটলাম, তোমার ওপর নিচ. জিহ্বা, মুখমণ্ডল, 

নাভিমূল ক্রমশ বন্ধুর-ভূমি--একান্ত অন্ধিসন্ধি গলিয়ে এক ব্ল্যাকহোল।     

ধর্ষণের সংজ্ঞাগুলি খুলতে খুলতে ব্যাস এক জায়গায় এসে থেমে গেল 

দেহ সিদ্ধিতে কি প্রেম লোপাট হয়ে যায়? 


তবু সে পবিত্র নদী 


পাঁক আসলে মনের গভীরে 

প্রতিটা জন্মের আগে উত্তেজিত মুহূর্তে  

চাই প্রপ্ৰপাত। 

তারপর সে বীজ ফুঁড়ে ওঠে 

সবুজ লমলমে চেহারায় একটি শিশু। 

সে জঠর ভেঙে যোনিপথ বেয়ে 

বিস্ফোরিত হয় এবং মা বলে ডেকে উঠে।  

তাই বলি, সঙ্গমের অন্তঃস্থলে 

সহস্র কামনা-বাসনা রয়ে গেছে-- 

তবু সে পবিত্র নদী 

গঙ্গা নর্মদা সেখানেই বয়ে চলে....


রং থেকে ভালবাসা  



সমস্ত রং একত্রিত করলে হয়ত  

তা থেকে ভালবাসা বেরিয়ে আসতে পারে। 

তুমি বললে, এ ভাবে কি ভালোবাসা খুঁজে পাবে ? 

আমি বলি, না হয় একটা রাতের অভিনয় চাইলাম 

তোমার কাছে--প্রেমের খোলস পরে  

তুমি অনাবিল হাসতেই পারো।  

অথবা তোমায় না পেয়ে 

কিছুটা ভালোবাসা না হয় উধার নিলাম। 

নাটক শেষের ভাড়া পোশাক পাল্টাবার পর-- 

আমি ফেরি করতে বেরোলাম, 

আমার বেসাতি বাজারে কেউ তোমরা এলে না-- 

বদ্ধ ঘরের জানালার আড়াল থেকে 

তবু তোমরা আমাকে দেখে যাচ্ছো !